চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
বর্তমান সমাজে অনেকেই এই চিরতা পাতা চেনে না। চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও
অপকারিতা দুটোই আছে। চিরতা পাতা এটি তিক্ত জাতীয় পাতা। এটি বিভিন্ন রোগ
নিরাময়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আবার এর কিছু ক্ষতিকর দিকও
রয়েছে।
চিরতার গাছ ছায়ারত স্থানে সাধারণত জন্মে থাকে। চলুন তাহলে জেনে নেই
আজকে এই পোস্টটির মাধ্যমে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার সঠিক তথ্য। আশা করি
আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনার চিরতার সকল সঠিক তথ্য জানা হয়ে যাবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
-
চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
-
চিরতা পাতা চেনার উপায়
-
চিরতা পাতা কোথায় জন্মায়
- চিরতা পাতা কিভাবে খেতে হয়
-
চিরতা পাতার পরিসীমা
-
চিরতা পাতা খেলে কোন কোন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
-
চিরতা পাতা খাওয়ার অপকারিতা
- চিরতা পাতা চাষ করার পদ্ধতি
-
রূপচর্চায় চিরতা পাতার উপকারিতা
- শেষ কথাঃ চিরতা পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
চিরতা পাতা আমাদের দেশে প্রাচীন যুগ থেকেই অতি পরিচিত হয়ে এসেছে এই চিরতা
মুহা ঔষধি গুনাগুন একটি গাছ। চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
রয়েছে। এটি স্বাদে তিক্ত হলেও এর অনেক গুনাগুন রয়েছে। প্রাচীন কাল
থেকে চিরতাপাতার বহুল ব্যবহৃত চিকিৎসা হয়ে আসছে। চিরতা পাতা বিভিন্ন
রোগ নিরাময়ের জন্য ভালো হলেও এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে।
চিরতা পাতা আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ও বেশ
কার্যকর। এছাড়াও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমে সহায়তা করে তাদের বিভিন্ন উপকার নিয়ে আসে এই চিরতা
পাতা খাওয়ার কারণে। এটি আমাদের শরীরের রোগ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই
আমাদের চিরতা পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা উচিত।
চিরতাপাতা চেনার উপায়
চিরতা পাতা সাধারণত হিমালয়ে জন্মে থাকে এটি সাধারণত ওষুধি গাছ হিসেবেই পরিচিত।
এই ঔষধি গাছ বাংলাদেশে বহু পরিচিত ঔষধি গাছ । বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাবে
কালো মেঘ নামেও বলে পরিচিত করা হয়। এই গাছের পাতার রং গাড়ো সবুজ রঙের হয়ে
থাকে। এবং এর পাতা লম্বা ধরনের হয়। এই গাছটির ফুল বেগুনি ও সাদা রংয়ের হয়ে
থাকে। গাছটির সবচেয়ে ভালোভাবে চেনার উপায় হল এই পাতা অতিরিক্ত তিক্ত স্বাদের
হয়ে থাকে।
এই গাছ ছায়া জায়গা ও রোদে হয়ে থাকে চিরতা পাতার দৈর্ঘ্য সাধারণত ১০
সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। গাছটির ফল ছোট আকারের হয়ে থাকে এবং এর বীজগুলো ছোট
ছোট। এই পাতা সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে বিভিন্ন রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়
তাই এই পাতার সঠিক গুনাগুন সকলেরই জানা উচিত। তাহলে বুঝতেই পারছেন চিরতা
পাতা কতটা উপকারী।
চিরতা পাতা কোথায় জন্মায়
চিরতা গাছ একটি মহা ঔষধি গাছ হলেও এই গাছ সব জায়গায় জন্মায় না। এটি
মূলত সবচেয়ে বেশি জন্মায় পাহাড়ে অঞ্চলে। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায়
সবচেয়ে এই গাছ বেশি চাষ করা হয়। এটি আবার ভারতবর্ষের প্রচুর পরিমাণে
জন্মায় আবার আশেপাশের দেশ গুলোতেও জন্মায়। আবার চট্টগ্রামসহ অন্যান্য
জেলা ও কিছু কিছু জায়গায় এই গাছ জন্মায়। আপনি চাইলে এই গাছগুলো
অনলাইনে স্টোরে মাধ্যমেও সংগ্রহ করতে পারেন। আবার শুকনো পাতা , আস্ত পাতা,
গুঁড়ো করাও সংগ্রহ করতে পারেন।
অনলাইনে ভালো মানের ওয়েবসাইট থেকে এগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন।
চিরতা গাছ রোদে ও ছায়া উভয় জায়গায় জন্মায় এই গাছ। চিরতা গাছ খাওয়ার আগে
অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত। পরবর্তীতে আপনার চিরতা
পাতা খাওয়ার ফলে কোন ধরনের সমস্যা না দেখা দেয়।
তবে আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন বা অন্য কোন ঔষধ সেবন করে থাকেন তাহলে
অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
চিরতা পাতা কিভাবে খেতে হয়
চিরতা পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই রয়েছে। তবে এই পাতা খেতে হলে কিছু
নিয়ম মেনে খেতে হয়। চিরতা পাতা অতিরিক্ত তিক্ত সাধের হলেও এর অনেক গুনাগুন
রয়েছে যেমন-ডায়াবেটিস এর জন্য উপকারী, জ্বর চর্মরোগ লিভার পরিষ্কার
রক্ত পরিশোধন হজম শক্তি এই সমস্ত রোগগুলোর নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
তাই আসল চিরতার পাতা কিভাবে খেতে হয় তা সম্পর্কে কিছু তথ্য
জেনে নেই।
- রোদে শুকানো চিরতা পাতা খাওয়ার উপায়ঃ প্রথমে পাঁচ থেকে সাত গ্রাম মত চিরতা পাতা নিয়ে নিন এরপর এক গ্লাস পানিতে সারারাত পাতাগুলো ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালবেলা এই পাতা গুলো ছেঁকে নিন ছেঁকে নেওয়া হয়ে গেলে এগুলো খালিপেটে পান করুন।
- গুঁড়ো করা চিরতা পাতা খাওয়ার উপায়ঃ প্রথমে চিরতা পাতা গুরুগুলো দুই থেকে তিন চামচ চিরতা পাতা গুড়া নিন এরপর গরম পানি সাথে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে নিন এরপর এগুলো কিছু সময় রেখে পান করুন দিনে1 থেকে দুই বার পান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
চিরতা পাতা ব্যবহারের পরিসীমা
চিরতা পাতা সাধারণত সীমিত পরিমানে খাওয়া উচিত। বেশি পরিমাণে খেলে এর পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া ও দেখা দিতে পারে। চিরতা পাতা দীর্ঘমেয়াদী খাওয়া উচিত নয়
তবে দীর্ঘমেয়াদি এই পাতা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ
নিয়ে খেতে হবে । চিরতা পাতা সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহের বেশি খাওয়া উচিত
নয়। এর বেশি সময় ধরে খেলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
চিরতা পাতা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য অনেক উপকারী একটি গাছ হলেও এর কিছু
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে । দীর্ঘমেয়াদি এই পাতা সেবন করলে শরীরের জন্য
বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের সঠিক পরিমাণ ও সঠিক নিয়মে খাওয়া
উচিত। তাহলে বুঝতেই পারছেন চিরতা ব্যবহারের পরিসীমা জানাটা আপনার জন্য কতটা
জরুরী।
চিরতা পাতা খেলে কোন কোন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
চিরতা পাতা রোগ প্রতিরোধ এর জন্য অনেক ঔষধি গুনাগুন একটি গাছ। এটি আমাদের শরীরে
বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। খালি পেটে সকালে চিরতা পাতার খেলে তোমার বিভিন্ন রোগ
থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চিরতা পাতার উপকারিতা
- লিভারের জন্য উপকারী
- হজমে সহায়তা করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব
- ত্বকের যত্নেও চিরতাপাতা ব্যবহার করা যায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- জ্বর ও ম্যালেরিয়াজনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
- রক্ত পরিষ্কার করে
- চুলকানি ও চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
চিরতা পাতা খাওয়ার অপকারিতা
চিরতা পাতা অনেক ঔষধি গুনাগুন থাকলেও এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। চিরতা
পাতা সেবন করলে যেমন বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার এটি
দীর্ঘমেয়াদী সেবন করলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়। চিরতা
খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই রয়েছে। এই পাতা অতিরিক্ত তেতো স্বাদের
হওয়ার কারণে দীর্ঘমেয়াদি এই পাতা সেবন করা উচিত নয়। চিরতা
পাতা সেবন করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সেবন করা উচিত।
চিরতা পাতা সেবনের ফলে মানুষ অনেক উপকৃত হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন
করলে ডায়াবেটিস যৌন সমস্যা কিডনি সমস্যা ও কম রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা
দেখা দিতে পারে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে
সেবন করা উচিত। গর্ভবতী মা ও স্তনদান কারি মেয়েদের চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী এই পাতার সেবন করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী টানা যদি দুই সপ্তাহের
বেশি এই পাতা সেবন করে তাহলে এর অপকারিতা দেখা দেয়। তাই দুই সপ্তাহের বেশি এই
পাতা সেবন করা উচিত নয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন চিরতা পাতা খাওয়ার
অপকারিতা সম্পর্কে তথ্য জানা আমাদের জন্য কতটা জরুরি।
চিরতা পাতা চাষ করার পদ্ধতি
চিরতা পাতা চাষ করতে হলে প্রথমে আপনাকে সঠিক মাটি নির্বাচন করতে হবে এই গাছ
সাধারণত দোআঁশ মাটিতে ভালোভাবে চাষ করা সম্ভব। এবং জলবায়ু স্থান
প্রয়োজন। এটি জমিতে বেড আকারে বীজ বা চারা লাগানোর পর ভালোভাবে এর পরিচর্যা
করতে হবে। চাষ করার আগে অবশ্যই আপনাকে কৃষি বিশেষজ্ঞ বা ঔষধি গাছের
নার্সারীর সাথে পরামর্শ নিতে হবে।
চিরতা গাছ চাষ করতে হলে আপনাকে একটি বেড আকার তৈরি করে এর ওপর বীজ রোপন করে
এরপর চাষ পদ্ধতি শুরু করতে হবে। সঠিক নিয়মে গাছের পরিচর্যা ও করতে হবে। এভাবে
চাইলেই খুব সহজে চিরতা পাতা চাষ করা পদ্ধতি সম্ভব। আপনারা চাইলে অনলাইন এর
মাধ্যমে এটি বিক্রয় করে অনেক লাভবান হতে পারবেন। চিরতা পাতা চাইলে আপনারা একই
নিয়মে এভাবে বাড়ির আশেপাশেও লাগিয়ে রাখতে পারেন ।
রূপচর্চায় চিরতা পাতার উপকারিতা
চিরতা পাতা যেমন আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারিতা এমন আমাদের ত্বকের জন্যও
অনেক উপকারী। চিরতা পাতা শরীরে চর্ম জনিত রোগ যেমন নিরাময় করে তেমন প্রণয়
সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চিরতা পাতা তেতো সাধের হওয়ার কারণে ত্বকের
সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। খুব সহজে পরিষ্কার রাখা যায়।তাই আমাদের সকলের
নিয়মিত রূপচর্চায় চিরতা পাতা ব্যাবহার করা উচিত।
চিরতা পাতা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জলতা
বাড়ায়। রক্ত পরিষ্কার
করার ফলে তকের ব্রনের সমস্যা সহ বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য
করে।চিরতা পাতা ভেজানো পানি সেবন করলে ত্বকের ভেতর থেকে সহজেই উজ্জলতা পাওয়া
যায়।আবার একটি পাত্রে কিছু চিরতা পাতা নিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে
তারপর একটি পেস্ট তৈরি করে ত্বকে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের উপকার পাওয়া
যায়।চিরতা পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চিরতার পাতার অনেক উপকার নিয়ে আসে।
শেষ কথাঃচিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের সকল ধরনের চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
ও অপকারিতা সম্পর্কে সকল জানানোর চেষ্টা করেছি। আপনারা যারা চিরতা সম্পর্কে
জানতেন না আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে । আপনি যদি সুস্থ
থাকতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে উপরের তথ্যগুলো মেনে চলতে হবে তাহলে চিরতা
পাতা সেবন করলেও আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না। আশা করছি আজকের এই পোষ্টের
মাধ্যমে আপনার চিরতা সম্পর্কে অজানা তথ্য জানা হয়ে যাবে।
আপনি যদি ওপরে দেখানো রোগ গুলোর মধ্যে কোন একটা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে
অবশ্যই ওপরের তথ্যগুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে। উপরের তথ্যগুলো সঠিক নিয়মে মেনে
চললে আপনার চিরতা পাতা সেবন করলেও আপনারা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না তাহলে
বুঝতেই পারছেন আজকের এই পোস্টটির আপনার জানাটা কতটা জরুরী। আশা করছি
আজকের এই পোস্টটির মাধ্যমে চিরতার সম্পর্কে আপনার সকল অজানা তথ্য জানতে পারবেন।
তাহলে বুঝতেই পারছেন রোগ মুক্তির জন্য চিরতা পাতা আপনার জন্য কতটা
উপকারী।
আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url