গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা

আপনি কি জানেন  গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। না জেনে থাকলে আজকের এই পোস্টে আপনার জন্য। আজকের এই পোষ্টের মধ্যে গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব।



 বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় একটি সবজি পুঁইশাক। বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষকেরা পুঁইশাক চাষ করে থাকে। পুইশাকের পাতা ডাটা এবং এর বিচি খাওয়া যায়। বলতে গেলে পুইশাকের সকল কিছুই খাওয়া যায়।

পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মায়েদের সবচেয়ে বেশি ভিটামিন , আয়রন,ও খনিজ, সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। আর পুইশাকের মধ্যে এ সকল উপাদান প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খেলে গর্ভবতী মায়ের সন্তান এবং তার নিজের জন্য খুবই উপকারী। প্রতি.১০০ গ্রাম পুঁইশাক দৈনিক চাহিদার প্রায় শতভাগ এরও বেশি ভিটামিন সি এর অভাব মেটাতে সক্ষম।

 ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়মিত পুই শাক খেলে প্রচুর পরিমাণ আয়রনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।  যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সহযোগিতা করা। এজন্য বলা যায় পুঁইশাকের উপকারিতা অনেক। গর্ভ অবস্থায় একজন মায়ের সকল পুষ্টি উপাদান গুলো খুবই প্রয়োজন। এছাড়াও নিয়মিত পুইশাক খেতে পারলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাই।

পুইশাক খাওয়ার অপকারিতা

পুঁইশাক একটিং সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর খাবার। পুই শাকের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি যেমন গর্ভাবস্থায় খাওয়া ভালো তেমনি সুস্থ ওসবল মানুষদের জন্য খাওয়া উপকারী । এটি ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।পুঁইশাক একটি ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ এটি লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এজন্য পুঁইশাক প্রচুর পরিমাণ লৌহ ক্যালসিয়াম ও মানুষের পরিমাণ অনেক বেশি।


পুঁইশাক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খুব উপকারী একটি সবজি। পুঁইশাকে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভুল উপকারি সবজি। এছাড়াও নিয়মিত খাওয়ার কারণে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক ও সচল ভাবে সঞ্চালন করার জন্য সাহায্য করে।

পুঁইশাক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্পন্ন খাবার। যা আমাদের চোখের জন্য খুবই উপকারী। পুইশাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে চোখের দৃষ্টিশক্তি অটুট রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য খুবই উপকারী। কারণ অতিরিক্ত বয়স হওয়ার কারণে দৃষ্টিশক্তি আস্তে আস্তে কমতে থাকে। নিয়মিত পুঁইশাক খেলে চোখের ছানি পড়া থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

পুঁইশাকের পুষ্টিগুণ 

পুঁইশাক স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু খাবার। এটি শুধুমাত্র খেতেই সুস্বাদু তা কিন্তু নয় এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে।পুঁইশাকে রয়েছে ভিটামিন এ, বি , সি , ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম এমনকি খনিজ ও হয়েছে। পুই
শাকের আয়রন থাকার কারণে আমাদের শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দিলে তা রক্তশূন্যতা সহজেই পূরণ করতে পারে।
গর্ভাবস্থায়-পুঁইশাক-খাওয়ার-উপকারিতা



পুঁইশাকে যে সকল ভিটামিন রয়েছেঃ
  •  ১০০ গ্রাম পুঁইশাকে  ক্যালরি ২৫ কিলো ক্যালরি থাকে। শর্করার পরিমাণ২.১ গ্রাম থাকে। ফ্যাট০.৩ গ্রাম 
  • ভিটামিন সি ৫১. ৮ মিলিগ্রাম 
  • ভিটামিন এ ১৭০আইইউ 
  • প্রোটিন ২. ৪ গ্রাম
  • পানি ৫১. ৮ গ্রাম
  • ডায়েটরি ফাইবার ১. ৪ গ্রাম
  • ম্যাগাজিন ০.৯ মিলিগ্রাম
এ সকল পুষ্টিকরণ গুলো পুই শাকের মধ্যে রয়েছে। অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান একসাথে থাকার কারণে গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্য খুবই উপকারী।

পুঁইশাকের বিচির উপকারিতা 

পুঁইশাক বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় খাদ্য। যা ছোট বড় সকলেই পছন্দ করে। পুঁই শাক খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায় তেমনি পুঁইশাকের বীজ বা বিচি খেলে আরও বেশি উপকৃত হওয়া সম্ভব। এজন্য পুঁইশাকের পাশাপাশি পুই শাকের বীজ বা বিচি অনেকেই পছন্দ করে। কারণ পুঁইশাকের বিচির মধ্যেও অনেক পুষ্টিগুণ ও উপকারী উপাদান রয়েছে।

আরো পড়ুন ঃ

পুঁইশাক খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের উপকার পাওয়া সম্ভব হয়। এটি ছোট বড় সকলে পছন্দ করে। এই পুঁইশাকের বীজ বা বিচি অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকরণ সম্পন্ন খাবার। পুঁইশাকের বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার যা আমাদের শরীরের পাইলসের সমস্যা থেকে দূর করতে সাহায্য করে। পুঁইশাকের বিচি খেলে ছেলেদের শুক্রানুর সংখ্যা বৃদ্ধি হয় । এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। নিয়মিত পুঁইশাক খেতে পারলে চর্বি বেড়ে যাওয়ায় সম্ভাবনা থাকে না। আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে পুঁইশাকের বিচির ভূমিকা অপরিসীম।

পুঁইশাক কি ওজন কমাতে সাহায্য করে

পুঁইশাক কি ওজন কমাতে সাহায্য করে। আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানবো পুঁইশাক খেলে কি ওজন কমাতে সাহায্য করে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবান হওয়ার কারণে চিন্তিত। কোনভাবেই শরীরের ওজন কমানো সম্ভব হচ্ছে না তাদেরই সমস্যার সমাধান নিয়ে আজকের এই পোস্টটি।

পুঁইশাকে রয়েছে ভিটামিন সি এবং আয়রন।  যা ক্যালরি ক্ষয় করতে অত্যন্ত কার্যকরী আমরা জানি ক্যালরি ক্ষয় হলে অতি সহজে শরীরের চর্বি কমানো যায়। এজন্য আপনি ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত পুইশাক খেতে পারে। তাহলে আপনি আপনার শরীরের বাড়তি চর্বি বা ওজন কমাতে সক্ষম হবে।

পুঁইশাক খেলে কি গ্যাস হয়

পুই শাক খেলে কি গ্যাস হয়? এ ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে পুঁইশাক খেলে কি গ্যাস হয় এর সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। যেকোনো খাবার তার যেমন উপকার রয়েছে তেমনি উপকারও রয়েছে। পুঁইশাক খেলে একটু গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়

কেন নয় ওর সাথে এক ধরনের অক্সলেট নামক উপাদান রয়েছে যা আমাদের পেটের মধ্যে এসিড তৈরি করে। এজন্য আমাদের পেটের মধ্যে ব্যাথা সৃষ্টি হয় এবং গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য অতিরিক্ত পুঁইশাক খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। শুধুমাত্র পুঁইশাক নয় অতিরিক্ত যেকোনো ধরনের খাবার খেলেই পেটের সমস্যা হতে পারে। গ্যাসের কারণে অতিরিক্ত পেটে জ্বালা করা হলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

পুঁইশাক গর্ভের সন্তানের জন্য ভালো কি

গর্ভবতী মায়েদের গর্ভের সন্তানের জন্য পুঁইশাক কি ভালো। এই ধরনের প্রশ্ন বেশিরভাগ গর্ভবতী মায়েরা করে থাকে। অবশ্যই গর্ভের সন্তানের জন্য পুঁইশাক অনেক উপকারী। পুঁইশাকে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট যা গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুবই উপকারী।
এছাড়া পুঁইশাকে থাকা ফাইবার বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবং বাচ্চাকে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।

তবে পুঁইশাক গর্ভ অবস্থায় অতিরিক্ত পুঁইশাক খাওয়া যাবে না। কারণ অতিরিক্ত পুঁইশাক খেলে পেটে ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। পেটে ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা হলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। তবে সপ্তাহে অন্তত দুইদিন খাদ্য তালিকার মধ্যে পুঁইশাক রাখা জরুরি। 

পুঁইশাক দাম কত

পুঁইশাক একটি জনপ্রিয় সবজি । বাংলাদেশের বেশিরভাগ কৃষক পুঁইশাকের চাষ করে থাকে।এজন্য বাংলাদেশের পুই শাকের দাম একেবারে কম। এটি শুধুমাত্র কৃষকেরায় চাষ করা তা না বাড়ির আঙিনায় বা ছাদ বাগানে পুইশাকের চাষ হয়ে থাকে। এজন্য বাজারে পুঁইশাক এর দাম অনেক কম হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন ঃ

সবজির বাজারে প্রায় প্রত্যেকটা দোকানদার এবং ব্যবসায়ীদের কাছে পুঁইশাক পাওয়া যায় ।এটি বাংলাদেশের প্রায় সারা বছর পাওয়া যায়। তবে গ্রীষ্মকালীন সময়ে পুঁইশাকের চাহিদা বেশি থাকে। ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে পুঁইশাক পাওয়া যায়। তবে গ্রীষ্মকালের শুরুর দিকে দাম একটু বেশি থাকে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া বেশিরভাগ সময় ২০ টাকায় পাওয়া যায়।

পুঁইশাক খেলে কি এলার্জি হই

পুঁইশাক খেলে কি এলার্জি হয় এ ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে। আসুন জেনে নিই ওইসব খেলে এলার্জি হয় কিনা। পুঁইশাক একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার এটি খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার পেয়ে থাকি। এলার্জির মূলত খুব কম মানুষের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।

এটি  সবার ক্ষেত্রে হয় না। পুঁইশাক খাওয়ার ফলে যাদের চুলকানি বা শ্বাসকষ্ট হয়। তাদের এই শুধুমাত্র পুঁইশাকে এলার্জি রয়েছে। এলার্জি থাকা অবস্থায় পুঁইশাক না খাওয়াই ভালো। তবে ভুল করে খেয়ে ফেললে যত দ্রুত সম্ভব অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। পুঁইশাক আপনার এলার্জি আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য প্রথমে অল্প পরিমাণ খেয়ে দেখতে হবে।

লেখকের শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্য পুঁইশাক অনেক উপকার। তাই নিয়মিত খাদ্য তালিকার মধ্যে পুঁইশাক রাখা জরুরী। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন পুঁইশাক খাদ্য তালিকা রাখা উচিত। পুঁইশাক শুধুমাত্র গর্ভবতী মায়েদের জন্যই উপকারী তা কিন্তু না। সাধারণ মানুষদের জন্য খুবই উপকারী।

আজকের এই পোষ্টের মধ্যে গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি। উপরে দেওয়া পুঁইশাক উপকার গুলোকে  গ্রহণ করুন এবং অপকার গুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করো। আশা করছি গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা দিতে পেরেছি। উপরের পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। আজকে এ পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url